জেলা প্রতিনিধি : মেহেরপুর সদর উপজেলার চকশ্যামনগর-বন্দর মাঠে নিম্নমানের বীজে বাঁধাকপি ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে। নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করায় প্রায় একশ বিঘা জমির বাঁধাকপির পাতা না বাড়ায় নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন কৃষকরা। জেবিটি সিডসের রাজাসান বাঁধাকপির বীজ কিনে এই ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা।
সরেজমিনে, চকশ্যামনগর-বন্দর মাঠে দেখা গেছে নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করায় মাঠের পর মাঠ বাঁধাকপির পাতা কুকড়ে ও পচে যাচ্ছে। তাই জেবিটি সিডসের রাজাসান কপির বীজ কিনে চাষিরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও কপির পাতা না বাঁধার কারণে অনেকে কপি নষ্ট করে জমিতে অন্য ফসল আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চাষিরা জানান, স্থানীয় চকশ্যামনগর-বন্দর এলাকার সার ব্যবসায়ী আনারুলের কাছে থেকে জেবিটি সিডসের সরবরাহকৃত রাজাসান বীজ ব্যবহার করা হয়। বীজ থেকে গাছ জন্মালেও এখন পাতা বাড়ছে না। অন্যরা অন্যান্য কোম্পানির দেওয়া বীজ রোপণ করে তারা বাঁধাকপি বাজারে তুলেছেন। অথচ জেবিটি কোম্পানির রাজাসান কপির পাতা এখন পর্যন্ত বাঁধেনি।
তারা বলেন, একেকটি গাছের ৩-৪টি ডগা গজিয়েছে। আবার অনেক পাতা কোকড়ানো ও পচে যাচ্ছে। সার বীজ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। এ কপি চাষ করতে বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চাষিদের দাবি বীজ ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এলে তাদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পোষানো সম্ভব।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কালু মন্ডল বলেন, স্থানীয় বীজ ডিলার আনারুলের কাছে রাজাসান জাতের বীজ কিনে এক বিঘা জমিতে কপি রোপণ করি। এতে আমার ১২ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। অন্যরা কপি বিক্রি করলেও আমার কপির এখনও পাতা বাড়ছে না। উপায় না পেয়ে সমস্ত চারা ভেঙে জমি চাষ দিয়েছি। এখন অন্য জাতের বাঁধাকপি বা অন্য ফসল চাষ করতে হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মিলন বলেন, ১৫ হাজার টাকায় জমি লিজ নিয়ে আনারুলের কাছ থেকে রাজাসান জাতের বীজ নিয়ে কপি আবাদ করেছিলাম। কপিতেও ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন কপির পাতা বাঁধছে না। কপির পাতা কুকড়ে যাচ্ছে, পচে যাচ্ছে। আনারুল আমাদের আসল রাজাসান বীজের কথা বললেও এখন দেখছি এগুলো ভেজাল বীজ। এমন অবস্থায় আমরা প্রতিকার চাই।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আনিছদ্দিন বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে কপি চাষ করে আসছি। অন্যান্য জাতের কপি চাষ করি। এ বছরে আনারুল রাজাসান কপি ভালো বলে প্রচার প্রচারণা চালালে আমি সেই বীজ সংগ্রহ করি। ১ মাস ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও কপির পাতা বাড়ছে না। এবিষয়ে আনারুলকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। মাঠে অন্য জাতের কপি বেচাকেনা চলছে। কিন্তু আমাদের কপি এখনও পাতাই বাঁধেনি। আমরা বড় ক্ষতির মধ্যে পড়েছি। কি করব আমরা। এই অবস্থায় ক্ষতিপূরণ দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্ত আবাদিরা। আরেক ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক নাজের আলী বলেন, আমি গত চার বছর যাবৎ রাজাসান কপি চাষ করছি। গত বছরে ভালো ফলন পেয়েছিলাম। এ বছরে মেহেরপুর বড়বাজারের সুমনা বীজ ভান্ডার থেকে বীজ সংগ্রহ করেছি। সুমন বলেছিল বীজের দাম একটু বেশি লাগবে কিন্তু বীজ ১ নম্বর হবে। তার কথামতো বীজ নিয়ে চারা দেই কিন্তু আজ ৩৭ দিন পার হলেও কপির পাতা তো বাড়ছেই না বরং কুকরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই কপি চাষ করতে আমি ৬০ হাজারের উপরে খরচ করেছি। আমি ধারদেনা করে কপিতে খরচ করেছি।
এবিষয়ে আনারুল ইসলাম বলেন, আমার মূলত সার ও বিষের ব্যবসা। আমি মেহেরপুর বড় বাজারের সুমনা বীজ ভান্ডার থেকে বীজ এনে চাষিদের দিয়েছিলাম। কপির সমস্যার বিষয়টি আমি শুনেছি। এ বিষয়ে সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে কিন্তু তার কোনো সাড়া মিলছে না।
সুমনা বীজ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সুমন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনো বীজ বিক্রিই করিনি। যে চাষি আমার কথা বলেছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, চাষিদের কাছ থেকে বিষয়টি শুনেছি। চাষিদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
|