আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অভি চৌধুরী বলেন
নিজস্ব সংবাদদাতা: কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ সাধারণ সম্পাদক অভি চৌধুরী বলেন, স্থানীয় সকল মুরব্বী, সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়েই কুষ্টিয়া-৪ কে কালচারাল হেরিটেজ এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এলাকায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আধ্যাত্মিক সাধক লালন ফকির, ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী বাঘা যতীন, অমর কথা সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন, নারী শিক্ষার অগ্রদূত-সাংবাদিকতার প্রতিকৃৎ উপমহাদেশের প্রথম প্রেস এমএন প্রেস-এর প্রতিষ্ঠাতা কাঙাল হরিনাথ মজুমদার, কারো মনে আঘাত সে আঘাত লাগে কাবাঘরে গানের রচয়িতা আজিজুর রহমান, ব্রিটিশ বিরোধী প্যারিচাঁদ সুন্দরী, গগন হরকরাসহ ৩৬ মনীষীর তীর্থভূমি কুমারখালী। আর ভক্তদের ভালোবাসা বিশ্বখ্যাত খোকসা উপাজেলার কালীবাড়ী। এতো গুণী ব্যক্তির আবির্ভাব এ মাটিতে অথচ আমরা এলাকাটিকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নিতে পারিনি। কারো সাথে মতবিরোধ নেই, জানিয়ে তিনি বলেন, বিগত দিনের রাজনীতিবিদরা, জনপ্রতিনিধিরা কমবেশি কাজ করেছেন। এলাকায় অন্য এলাকার মতো অতোটা অভাব নেই কিন্তু যুবসমাজ আজ মাদকের মতো ভয়াল থাবায় নিমজ্জিত। কর্মসংস্থান বাড়ছে না। দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলায় অনেকেই হতাশ হয়ে পড়ছে। এলাকাটিকে একটি গর্বের ঠিকানায় পৌছে দিতে কাজ করতে চাই। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশ নেবার জন্যে নানা দেন-দরবার করছে। কিন্তু আমি যদি বিনয়ের সাথে প্রশ্ন করি, উল্লেখিত সময়ে আপনারা জনগণকে কি দিয়েছেন? করোনা, শীত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আপনারা কতোটুকু কাজ করেছেন? বরঞ্চ সরকারের উন্নয়ন অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত আবার কখনো বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছেন। সংলাপে ডাক পেলেও হরতালের অযুহাতে আসেননি। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখাজীকে একরকম অপমানই করেছেন। দেশের সংস্কৃতি ধ্বংসের নেপথ্যে কিন্তু আপনারাই কাজ করেছেন।
অভি চৌধুরী বলেন, এখন সারাদেশে প্রথম থেকে ১০ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এদিকে দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ চলছে। টিভিতে শিক্ষার্থীরা দেখছে বাসে আগুন, পুলিশ পিটিয়ে হত্যা, হত্যার পর চাপাতি দিয়ে কোপানো, বোমা-অগ্নিসংযোগের খবর। দেখছে স্কুল কিংবা বিভিন্ন বিল্ডিং ভাঙচুর। এসব দেখে স্বভাবতই শিক্ষার্থীরা ভাবছে এ দলটি এমন কেন? এদিকে কানাডার আদালত, আমেরিকার এফবিআই বলছে-বিএনপি সন্ত্রাসী দল। একাধিক আদালত বলেছে তারেক জিয়া ডেঞ্জারাস ম্যান। এগুলোর বিপরীতে বিএনপির কোনো ব্যাখ্যা নেই। আজ যাদের বয়স ২৫-৩০ বছর তারা বিএনপি রাজনীতির ভালো কিছু দেখেনি। তারা পত্রিকা-টিভি-অনলাইনে জেনেছে খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে জেলে রয়েছেন। তারেক জিয়া রাজনীতি করবে না বলে মুচলেখা দিয়ে লন্ডনে পালিয়ে আছেন। তার বাংলাদেশী পাসপোর্টও স্যারেন্ডার করা। তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা মামলায় দন্ডিত। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বয়সের ভারে আবোল-তাবোল বলছেন। বলছেন তারেক রহমান শিশু আর খালেদা প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তান ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায়। বাংলাদেশ বিশ^ অর্থনীতিতে ৩৫তম অর্থনৈতিক দেশ। যেখানে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে-অথচ ফখরুল সাহেব বলছেন পাকিস্তান আমলে আমরা ভালো ছিলাম?
বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জঙ্গি স্টাইলে গোপন স্থান থেকে ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়ে অবরোধ আর নৈরাজ্যের নির্দেশ দিচ্ছেন। মৃত্যুর আগে অনেক কষ্ট নিয়ে বিএনপি ছেড়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান, ব্রিগে. জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুক। আর মেজর হাফিজ, মেজর আকতারুজ্জামান বিএনপির রাজনীতিকে বলছেন ভুলে ভরা। ২৮ অক্টোবর সরকার পতন না হলে হাতে চুড়ি পড়বেন বলেছিলেন মির্জা ফখরুল। এখন ফেসবুকে লোকজন ব্যর্থ বিএনপি নেতা তারেক আর মির্জা ফখরুল সাহেবকে চুড়ি পরিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। এতে বিএনপির নেতৃবৃন্দের মধ্যে হতাশা বেড়েই চলেছে।
এ দলটি কি চায় নিজেরাই জানে না। গত ১৫ বছরে বিএনপি জনগণের পাশে ছিল না। জনগণকে তারা কষ্ট ছাড়া কিছুই দেননি। তাদের নেতা নির্বাচনে সম্মেলন নেই ৮ বছর। অঙ্গ সংগঠনের অবস্থা আরো খারাপ।
জেনারেল জিয়া ক্যাডেট কলেজে পড়তেন। রাজনীতির ছাত্র না হয়ে ক‚টকৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে সেনাপ্রধান, প্রধান সামরিক প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত হন। সমগ্র বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে ৭৭ সালে হ্যা-না ভোটে ৯৮.৯৮% ভোট পান। সরকারি কর্মকর্তাদের জিম্মি করে এ কাজটি করেছিলেন তিনি। বাস্তবে কোনো ভোট কেন্দ্রে না বাক্স ছিল না। ভোট পড়েছিল ১ থেকে ২%।
শিয়ালের চেয়ে ধূর্ত বাঘ্রের চেয়ে হিংস্র জিয়া রাষ্ট্রপতি পদ দখল করেই ১১৫২ জন সেনা সদস্যকে ফাঁসিতে ঝোলান। কাঙ্গারু কোর্টে বিচার করতেন। বিচারের রায় লোক দিয়ে লিখে স্বাক্ষর করাতেন দায়িত্বপ্রাপ্তদের দিয়ে। সেখানেও নয়টি কোর্টের মাত্র ২টি কোর্ট যাদের যোগ্যতা ছিল সৈনিকের কিছু উপরে। প্রায় ১০০ সামরিক দন্ডবিধি জারি করেছিলেন তিনি। তুমি হাঁসলে কেন? হাঁটলে কেন? জোরে হাঁটলে কেন, এতেই ফাঁসি দিতেন ইচ্ছেমত। কারণ তাদের অপরাধ তারা বঙ্গবন্ধুর আর্দশে বিশ্বাস করতেন। মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান করতেন। পঙ্গু মানুষকে ফাঁসি দেয়া যায় না অথচ জিয়ার জীবন রক্ষাকারী কর্ণেল তাহেরকে তিনি ফাঁসিতে ঝোলান। অথচ জিয়া ক্যান্টমেন্টে চাকরিকালীন প্রায় দুপুরে স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণকারী কর্ণেল তাহেরের বাসায় যেতেন। কর্ণেল তাহের সমাজতন্ত্রের গল্প শোনাতেন। তার সঙ্গে আলাপ করে জিয়া রাজনীতির শিক্ষা নিতেন। রাজনীতির ধারণা জিয়া মূলত কর্ণেল তাহেরের কাছ থেকে নেন।
আওয়ামী লীগকে টুকরো টুকরো করেছিলেন জিয়া। কেবলমাত্র পাশ করা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে আওয়ামী লীগ সভাপতি মালেক উকিলের বিরুদ্ধে দাড় করিয়ে মওদুদকে বিপুল ভোটে জেতান ক‚টকৌশলে। ঐ সময় মালেক উকিল পেয়েছিলেন মাত্র ১০১২ ভোট। আর মওদুদ পেয়েছিলেন প্রায় ৪৫০০ ভোট। নির্বাচন কমিশন পিপিআরএ আওয়ামী লীগের জমা দেয়া কাগজপত্রে মুখবন্দে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামটি বাদ না দিলে নির্বাচন করতে দেবেন না জানিয়ে দেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাজেদা চৌধুরীকে।
৭৯ সালে ২৫০ জন মানবতাবিরোধী অপরাধীকে নমিনেশন দেন জিয়া। শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী বানান। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যত ধরনের প্রোপ্রাগান্ডা করা যায় তিনি করেছেন। আওয়ামী লীগকে ভারতের দালাল বলেছেন। তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরাজদী দেশাই জিয়ার গায়ে আর্মির পোশাক দেখে বলেন এ পোশাক পরা মানুষের সাথে আমি কথা বলতে পারি না। ধার করা অর্থের ধারকের মতো জিয়ার অবস্থা। বঙ্গবন্ধুর আমলে মানবতাবিরোধী অপরাধে কারাগারে থাকা মশিউর রহমান যাদু মিয়ার কাছ থেকে ধার নেন ধানের শীর্ষ মার্কা। পরে মশিউরকে মন্ত্রী বানান তিনি।
বেগম জিয়া বাংলাদেশের মানুষকে অপমান করেন স্বাধীনতাবিরোধী আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন। যা করে তিনি দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। যারা দেশ চাননি নিজামী-মুজাহিদকে মন্ত্রী বানিয়েছেন। সাবেক ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, ঘাদানি সভাপতি শাহরিয়ার কবীরের বিরুদ্ধে বিএনপির সময়ে ময়মনসিংহ সিনেমা হলে বোমা হামলার জন্য মামলা হয়েছিল। সাবের হোসেন চৌধুরী বিরুদ্ধে প্লেট চুরির মামলা হয় একই সময়।
৫টি ভুয়া জন্মদিন। ১৫ আগস্ট মিথ্যা জন্মদিন পালন করেছেন বেগম জিয়া। জেনারেল জানজুয়ার মৃত্যুতে পাকিস্তান জাতীয় সংসদ শোকবার্তা পাঠান তিনি। গোপালগঞ্জের নাম পাল্টে দেবেন এমন কথা বেগম জিয়ার মুখে সরাসরি শুনেছেন দেশবাসী। মুফতি হান্নান স্বীকার করেছেন ২০ মন বোমার বারুদ গোপালগঞ্জে মাটির নিচে পুতে রাখেন। বেগম জিয়া বলেছিলেন আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধীদলেও আসতে পারবে না। যারা দেশের পতাকার রঙ পরিবর্তন করতে চেয়েছিল, এই গোষ্ঠী ৭৪’র দুর্ভিক্ষের জন্য কাজ করেছিল। ৭৫’র বঙ্গবন্ধু হত্যা, ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় ৪ নেতা হত্যা একই সূত্রে গাঁথা। যে কাজটি করেছিলেন জিয়া ও তার সহযোগীরা। আর ২১ আগস্ট তার স্ত্রী ও পুত্র আর্জেস বোমা (যা যুদ্ধ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়) হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। এ কারণেই কথাটি প্রযোজ্য হবে এ হামলায় আইভি রহমান সহ ২৪ জন ঘটনাস্থলেই প্রাণ দেন। আহত ও স্প্রিন্টারবিদ্ধ মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০০০। হাতপাতালে সেদিন দায়িত্বরত চিকিৎসদের ছুটি দিয়ে দেয়া হয়েছিল। জাহাঙ্গীর গেট থেকে শেখ হাসিনাকে হেটে সিএমএইচ-এ যেতে হয়েছিল। সংসদে শোক প্রস্তাব করার সুযোগটি দেনটি সে সময়ের স্পীকার। বরঞ্চ সংসদ নেতা খালেদা জিয়া বলেছিলেন হাসিনা আত্মহত্যার জন্য ভ্যানিটি ব্যাগে করে বোমা নিয়ে এসেছিলেন। তারপর কতো নাটক। জজ মিয়া স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন তাকে পুলিশ কর্মকর্তা দিয়ে এগুলো করা হয়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে বেগম জিয়ার বক্তব্য ছিল হাসিনা পদ্মা সেতু করতে পারবে না। করলেও তা ভাঙাচোরা। আপনারা ঐ সেতুতে উঠবেন না। শোক জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপমানিত হোন তার সামনেই দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। বারবার সংলাপ বিষয়ে বসানোর চেষ্টা হলেও বিভিন্ন অযুহাতে বেগম জিয়া তা এড়িয়ে যান। বিএনপির ৯১-৯৬ সময়ে আমাদের হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি ৮০% ধ্বংস হয়ে যায়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়া মানুষের কাছে দেওয়া ওয়াদা ভঙ্গ করেছিলেন। গণতন্ত্রকে বুটের তলায় চেপে ধরেছিলেন। মত প্রকাশের সকর স্বাধীনতা ৫ শতাধিক গণবিরোধী করেছিলেন। ফাঁসির আসামীদের উচ্চ আদালতে আপীলের সুযোগ দেননি। ৭৯ সালে ২৫০ জন মানবতাবিরোধী ব্যক্তিকে নমিনেশন দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৮৪জন ছিলেন চিহ্নিত রাজাকার। আওয়ামী লীগের মতো দলের সভাপতি মালেক উকিলকে দুটি আসনেই পরাজিত করার ব্যবস্থা করেছিলেন। ঐ সময়ের প্লে-বয় ব্যারিস্টার মওদুদকে ৪৮ হাজার ৩০২ ভোটে মাকেল উকিলকে দিয়েছিলেন মাত্র ৯ হাজার ১৪২ ভোট। প্রেসিডেন্ট হবার পরেও আর্মির পোশাক পড়ে দেশ চালিয়েছিলেন। শাহ আজিজুর রহমান প্রধানমন্ত্রী, মশিউর রহমান যাদু মিয়াকে মন্ত্রি বানিয়ে তার দলের ধানের শীষ মার্কা ধার নিয়েছিলেন। এতো কিছুর পরেও দেশবাসী বিএনপিকে কিভাবে গ্রহণ করবে এটাই দেখার বিষয়।
|