ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালীতে এখন দম ফেলার ফুরসত নেই চাষিদের। আসন্ন তিন দিবসের বাজার ধরতে ব্যস্ত ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা। প্রকৃতিতে গরমের আভাস থাকায় গোলাপের প্রস্ফুটন ঠেকাতে গোলাপ-কলিতে পরানো হচ্ছে ক্যাপ।
এরইমধ্যে দাম বাড়তে শুরু করেছে গোলাপের। গদখালী ফুলের বাজারও জমে উঠছে ধীরে ধীরে। তিন দিবস- বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস আর মাতৃভাষা দিবস ঘিরে শত কোটি টাকার ফুল বেচাকেনার প্রত্যাশা করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
গদখালী ফুলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাইকেল-ভ্যানে বাহারি ফুল নিয়ে বাজারে এসেছেন চাষিরা। তাদের কারও কাছে গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা; কারও কাছে জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকাসহ বাহারি সব ফুল। দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যাপারীরা সেই ফুল কিনছেন। ফুল বেচাকেনার এমন হাঁকডাক যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের সড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালী বাজারের। হঠাৎ গরম পড়ায় ফুল ফুটে যাওয়ায় বাজারে ফুলের যোগানও বেশি। গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, চন্দ্র মল্লিকা, গাঁদা ফুলের দাম কিছুটা কম হলেও ঊর্ধ্বমুখী গোলাপের দাম। মাত্র কয়েকদিন আগেও যে গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৩ থেকে ৫ টাকায়, সেই গোলাপ এখন বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা দরে।
চাষিদের দাবি, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে বাড়তে শুরু করেছে ফুলের দাম। সামনের দিনগুলোতে ফুলের দাম আরও বাড়বে এবং তারা লাভবান হবেন।
একশ পিসের আঁটি বেঁধে ১৩ আঁটি গোলাপ নিয়ে এসেছেন পানিসারার হাঁড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান। সাইকেলের পেছনে বেঁধে বিক্রির জন্য গদখালী বাজারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাকে। বাজারে আসার পর ব্যাপারীরা দাম-দর করছেন। দাম পছন্দ না হওয়ায় গোলাপগুলো ছাড়লেন না তিনি।
আব্দুল মান্নান জানান, ‘এ বছর ফুলের তেমন দাম নেই। দুই বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছি। আজ বাজারে ১৩০০ পিস ফুল এনেছি। এর মধ্যে ৭ টাকা পিস দরে এক হাজার গোলাপ ৭ হাজারে বিক্রি করেছি। বাকি তিনশ গোলাপ একটু কম বলছে, তাই দিইনি। এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে ফুলে একটু লসে আছি। তবে আশা করছি সামনের অনুষ্ঠানগুলোতে ভালো দাম পেলে লাভবান হতে পারবো।’
জালাল হোসেন নামে অপর এক চাষি বলেন, ‘১৪ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ফুলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। যে গোলাপ ৩ থেকে ৫ টাকা গত চার দিন আগে বিক্রি করেছি, সেই গোলাপ আজ ৭ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। জারবেরা বিক্রি করেছি ১০ থেকে ১৫ টাকা ও চন্দ্রমল্লিকা দুই তিন টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে আরও ভালো দাম পাবো।’
আকবর হোসেন নামে আরেক চাষি বলেন, ‘প্রথম দিকে গোলাপের দাম বেশ কম পাচ্ছিলাম। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দাম বাড়ছে। ক্ষেতে যে ফুল রয়েছে, তা আগামীতে ১৫-১৬ টাকা দরে বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’
গোলাপের দাম মূলত আকার, রং ও সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করে বলেও তিনি জানান।
|