মিয়া আবদুল হান্নান : পৃথিবীতে ন্যায় প্রতিষ্ঠা ইসলামের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। মুসলমানদের একটি প্রধান ও আবশ্যিক বৈশিষ্ট্য ন্যায়পরায়ণতা। কোনো মুসলমান অন্যায় ও জুলুমের সাথে জড়িত থাকতে পারে না বা জুলুম সমর্থন করতে পারে না। পবিত্র কোরআনে ন্যায় প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, হকদারদের হক তাদের কাছে পৌঁছে দিতে। তোমরা যখন মানুষের মাঝে বিচার করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে কত উত্তম উপদেশই না দিচ্ছেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন। (সুরা নিসা: ৫৮)
অন্যের জমিজমাসহ যে কোনো রকম সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করা কবিরা গুনাহ। কেউ যদি বিচার ব্যবস্থা ব্যবহার করেও অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ গ্রহণ করে, তাও হারামই থাকে, বৈধ হয়ে যায় না। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তোমরা একে অন্যের সম্পদ অবৈধভাবে ভক্ষণ করো না এবং মানুষের সম্পদের কিছু অংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করার জন্য বিচারকদের কাছে উপস্থাপন করো না। (সুরা বাকারা: ১৮৮)
বিভিন্ন বর্ণনায় নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অন্যের সম্পদ বিশেষত জমিজমা আত্মসাৎ করার ভয়াবহ শাস্তির ঘোষণা এসেছে। বলা হয়েছে, কেউ যদি কারো সামান্য পরিমাণ জমিজমা দখল করে, কেয়ামতের দিন ওই জমি তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। তাকে সাত স্তর জমির নিচে ধসিয়ে দেওয়া হবে।
হজরত সাঈদ ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কারো জমির কোনো অংশ জুলুম করে কেড়ে নেয়, কেয়ামতের দিন ওই জমিনের সাত স্তর তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি)
আরেক বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে সামান্য পরিমাণ জমিও দখল করবে, কেয়ামতের দিন তাকে সাত স্তর জমিনের নিচ পর্যন্ত ধসিয়ে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি)
আবু সালামাহ (রহ.) বলেন, তার এবং কয়েকজন লোকের মধ্যে বিবাদ ছিল। হজরত আয়েশার (রা.) কাছে তা উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, আবু সালামাহ! জমির ব্যাপারে সতর্ক থাকো। নবিজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এক বিঘত জমি অন্যায়ভাবে নিয়ে নেয়, কেয়ামতের দিন ওই জমির সাত স্তর তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি)
হাদিসে বর্ণিত এ কঠোর শাস্তি শুধু সন্ত্রাসের মাধ্যমে দখলের ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়, মিথ্যা মামলা দিয়ে, মিথ্যা দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করে জমিজমা দখল করা হলে সে ব্যাপারে এ হাদিসগুলো প্রযোজ্য। তাদেরও এই শাস্তি ভোগ করতে হবে।
উম্মে সালামা (রা.) বলেন, একদিন নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘর থেকে বের হয়ে দেখলেন একদল লোক উঁচু গলায় তাদের মধ্যকার একটা সমস্যা নিয়ে বিবাদ করছে। রাসুল (সা.) বললেন, আপনারা আমার কাছে ঝগড়া বিবাদ সমাধানের উদ্দেশ্যে আসেন। আমিও একজন মানুষ। আপনাদের অনেকে অন্যের তুলনায় নিজের যুক্তি-প্রমাণ পেশ করায় বেশি পারঙ্গম। আমি তার কথা শুনে প্রভাবিত হয়ে তার অনুকূলে ফয়সালা করে ফেলতে পারি। বিচারের ফয়সালায় কাউকে তার ভাইয়ের প্রাপ্য কোনো অংশ দিয়ে দেওয়া হলে সে যেন তা গ্রহণ না করে। সেটা একটা আগুনের টুকরা ছাড়া কিছুই না। (সহিহ মুসলিম)
মিথ্যা মামলা ও মিথ্যা দলিল-প্রমাণের মাধ্যমে জমিজমা বা অন্য সম্পদ দখল করলে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ ও দখলের শাস্তির পাশাপাশি মিথ্যা মামলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্যও শাস্তি ভোগ করতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তির সুপারিশ আল্লাহ তাআলার কোনো দণ্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়, সে যেন আল্লাহ তাআলার সাথে দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ হলো। যে ব্যক্তি জেনে বুঝে কোনো অন্যায় বা অপকর্মের পক্ষে বিবাদ করে, সে ওই কাজ থেকে বিরত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তার ওপর ক্রুদ্ধ ও অসন্তুষ্ট থাকেন। যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে এমন কোনো দোষে অভিযুক্ত করে যা তার মধ্যে নেই, সে যদি তার অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিজেকে মুক্ত ও পবিত্র না করে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামীদের দূষিত রক্ত ও পুঁজের মধ্যে নিয়ে ফেলবেন। (সুনানে আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)
|