রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে লজ্জা লাগে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
তিনি বলেন, যন্ত্রাংশ তৈরি ও যুক্তকরণে যাত্রা শুরু হয়েছিল রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেডের, যারা এখন হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানাচ্ছে। আরেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেড, যাদের গাড়ি বানানোর সক্ষমতা থাকা দরকার ছিল, তারা এখন শুধু গাড়ির ফিল্টার বানানোর চুক্তি করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দেখে লজ্জা লাগে।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনে ‘রোড টু মেড ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড অ্যাগ্রো মেশিনারি ফেয়ার ২০২৫’ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, স্বাধীনতার পূর্বে পণ্য উৎপাদনে আমাদের যে বৈচিত্র্য ছিল, এখন সেটাও নেই। ‘অ্যান্টি ম্যানুফ্যাকচারিং বায়াস’ হয়ে গেলো এ জাতি। আমরা একদম পিছিয়ে গেলাম।
তিনি বলেন, যেখানে দেশে স্বাধীনতার পূর্বে অনেক বড় বড় শিল্প ছিল। এখন আমরা প্রতিষ্ঠান দিয়ে বছরে চার-পাঁচ লাখ মোটরসাইকেল বানাচ্ছি, কিন্তু বাস্তবে এখনো একটাও ইঞ্জিন বানাতে পারিনি। বিশ্বে যেখানে ড্রোন ও রোবট দিয়ে কৃষির চাষাবাদ হয়, তখন আমরা পাওয়ার টিলার আর কম্বাইন হারভেস্টারে পড়ে আছি।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আসলে আমাদের একটা পরিষ্কার মডেল দরকার। ব্যয়ের উদ্বৃত্ত তৈরি করা দরকার। শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গেলে ‘স্ট্যান্ডারাইজড’ করতে হবে। সাময়িক সময়ের জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করে নিজেদের শিল্প নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। একটা পরিষ্কার টার্গেট নিতে হবে।
তিনি বলেন, যদি আমার বাবার জেনারেশনে ফিরে যাই, ওই সময়ের জেনারেশনের ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রচুর উদ্যোগ দেখেছি, যা এখন নেই। কারও তেমন কিছু করার আগ্রহ নেই। যাদের সম্পদ ও সক্ষমতা আছে, তাদের হয়তো ভোগের প্রতি মহা আগ্রহ। বরং কোনো নতুন উদ্যোগ না নেওয়ার জন্য তাদের ১০১টি অজুহাত রয়েছে।
এ সময় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা গত ৩০ বছর ধরে রেমিট্যান্স আর পোশাক নিয়ে এগিয়েছি। তবে এসব আর অর্থনীতির মূল চালকের শক্তিতে থাকবে না। নতুনভাবে এখন কৃষি, এসএমই ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অর্থনীতির মূল চালকের জায়গায় এসব খাত লালন করতে হবে।
তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ঐকমত্যের মধ্যে গড়ে তোলা অর্থনীতির দিকনির্দেশনা। রাজনৈতিক ঐকমত্য কিংবা এলডিসি হবে কি না সেটা সবচেয়ে গুরুত্বের নয়, আমাদের একটা ন্যাশনাল মুড দরকার।
তিনি বলেন, একটু একটু করে আমরা এগোচ্ছি- এগুলো বললে হবে না, এখন আমাদের দৌড়াতে হবে। আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নের আলোচনা সব সময় খণ্ডিত। সেটা কর্মসংস্থান, এসএমইবান্ধব নয়। পরিষ্কার দিকনির্দেশনা নেই।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। বক্তব্য দেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও এগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাফিজুর রহমান খান, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও এগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
প্রদর্শনীতে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তা, নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।