ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিজিবির হাতে আটক হয়েছেন আলোচিত সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাতে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত থেকে তাকে আটক করে বিজিবি।
পালিয়ে যাওয়ার সময় নগদ ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা, ব্রিটিশ পাসপোর্টসহ ব্যক্তিগত বিভিন্ন সামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যান মানিক। কিন্তু যাদের সঙ্গে তিনি পালিয়ে যাওয়ার চুক্তি করেছিলেন, তারাই সব কেড়ে নিয়ে লাপাত্তা।
ভারতে পালানোর সময় এই বিচারপতির একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এরইমধ্যে ভিডিওটি ভাইরালও হয়েছে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, কী কী নিয়ে পালাচ্ছিলেন-এমন প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি মানিক বলেন, আমার সঙ্গে ছিল ব্রিটিশ পাসপোর্ট, বাংলা পাসপোর্ট, নগদ কিছু টাকা, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড।
এ সময় পাশ থেকে একজন জানতে চান, আজকে আটকের সময় আপনার সাথে কী ছিল? জবাবে সাবেক এই বিচারপতি জানান, তেমন কিছু ছিল না। চল্লিশ হাজারের মতো টাকা ছিল। গতকাল ৬০/৭০ (লাখ) এর মতো ছিল। ওটা নিয়ে গেছে।
নৌকাওয়ালা নিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেগুলো ওই দুই ছোকরাই নিয়েছে। আমার সঙ্গে কিচ্ছু নাই, ফোন-ফোন নম্বর সব নিয়ে গেছে।
আলোচিত সাবেক এই বিচারপতি আরও বলেন, আমি ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে আসছিলাম, ওই টাকা আমি তাদের দিয়েছি। কিন্তু পরে ওই দুই ছেলে আমাকে মারধর করে সব নিয়ে গেছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, কেউ সাবেক বিচারপতি মানিকের গলায় গামছা পেঁচিয়ে হাত দিয়ে ধরে রেখেছেন। আরেকজন তার নাম জিজ্ঞেস করছেন। এ সময় বিচারপতি মানিক তার পুরো নাম বলেন এবং তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জ বলে জানান।
বিচারপতি মানিক আরও বলেন, আমি ১৫ হাজার টাকার কথা বলে সীমান্ত পার হতে চাচ্ছিলাম। পরে আমাকে দুই ছেলে ভারত সীমান্তে নিয়ে আমার সাথে থাকা ৬০-৭০ লাখ টাকা এবং মোবাইল নিয়ে যায়।
এ সময় কয়েকজন তাকে জিজ্ঞেস করেন যে, আপনি পালিয়ে যাচ্ছিলেন কেন। তখন বিচারপতি মানিক বলেন, প্রশাসনের ভয়ে পালিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম। তখন অপর পাশ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি তো অনেক জুলুম করেছেন। তখন তিনি বলেন, আমি কোনো জুলুম করিনি।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নানা সময় বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি।
এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে অবসরে যান। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও টেলিভিশন টকশোতে কথা বলতেন তিনি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় মানিকের নামে গত সোমবার নোয়াখালীর আদালতে মামলা হয়েছে। কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান পলাশ বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ নম্বর আমলি আদালতে মামলাটি করেন।
একই অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালতে আইনজীবী মো. জিয়াউল হক বাদী হয়ে আরেকটি মামলার আবেদন করেন। আদালত অভিযোগটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা। আত্মগোপনের তালিকায় আছেন সাবেক মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা। তাদের কেউ কেউ গ্রেফতারও হয়েছেন।
|