মির্জা আব্দুর রব বুলবুল, স্টাফ রিপোর্টার : নদী, খাল ও বিল এ তিনে গঠিত হয় চলনবিল। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক চলনবিলাঞ্চলের বিভিন্ন পয়েন্ট গুলোতে শীতের হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করেছে। চলনবিলাঞ্চলের ৯টি উপজেলা হ’ল তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমহর, গুরুদাসপুর, সিংড়া ও আত্রাই উল্লেখযোগ্য। সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ও পাবনা জেলার চাটমহর উপজেলার বিরাইনগর গ্রামের করতোয়া নদীতে সুদুর সাইব্রেরিয়া ও আফ্রিকা অঞ্চল থেকে আগত অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠছে পুরা এলাকা। এদিকে নদীটির মধ্যে হাজার হাজার পাখি সারাক্ষণ মুখরিত করে রেখেছে, এলাকা জুড়ে এক মনোমগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে । এক নজর পাখি দেখতে প্রতিদিন দুর-দুরান্ত থেকে আগত শতশত পাখি প্রেমীরা দল বেঁধে ভীড় জমাচ্ছে পাখির আবাসনস্থলে। এ নদীটিতে প্রতিবছর শীত মৌসুমে হাজার হাজার অতিথি ও দেশীয় প্রজাতির নানা রকমের পাখির আগমন ঘটে। প্রতিবছর শীতকাল এলেই এ নদীটিতে বিভিন্ন প্রকার অতিথি পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে। এই নদীটি খুব একটা বড় না হলেও পাখির আবাসনস্থল হিসেবে বিলাঞ্চলের মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। এখানকার পাখিদের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি, উড়ে চলা সবই নীরবে বসে পাখি প্রেমীদের আকৃষ্ট করে। সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, নদীর শান্ত পানির বুকে সবুজ কুচুরিপানার গালিচার মাঝে ঝাঁক বেঁধে অতিথি পাখির দল ডানা মেলছে যা দেখার মত এক অপরূপ দৃশ্য। এখানে দেশী প্রজাতির পাখি শ্যামকৈল, পানকৌড়ি, ছন্নি হাঁস, বক, টোগা এবং বিদেশী পাখিদের মধ্যে বালি হাঁস, পিয়াং হাঁস, পাতি সরালি, লেঙ্গা হাঁস সহ নানা জাতের পাখিরা পুরা এলাকা মুখরিত করে তুলছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে পাখির আগমন ঘটেছে প্রায় অর্ধেক। এ বছরেও তিব্বতীয়,মানিকচক, সাইব্রেরিয়ান ফিদ্দাসহ অনেক অতিথি পাখি এসেছে যা চোখে পড়ার মত। এলাকার জনসাধারণকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন যে, এ বছর এখানে আনুমানিক প্রায় ১২-১৩ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিচরণ করছে। আগত সকল পাখিদের শিকারীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য গ্রামবাসী সজাগ দৃষ্টি রাখছে এবং পাহারা দিচ্ছে। গ্রামবাসী ও এলাকার জনসাধারণ পাখিদের আশ্রয়স্থল নিরাপদ রাখার জন্য যথাযথ ও প্রয়োজনীয় গ্রহণে স্থানীয় প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছেন। চলতি বছরে এ নদীতে রং বেরঙ্গের পাখির আগমন ঘটেছে, পাখি গুলো দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে। এ ব্যাপারে কথা তাড়াশ উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম ও তাড়াশ মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আলী আশরাফ এর সাথে তারা উভয়ে আন্তরিকতার সহিত এ প্রতিবেদককে জানান। অতিথি পাখিরা শীতকালের অপরূপ সৌন্দর্য বহন করে থাকে। এ সময়ে অতিথি পাখিদের উপস্থিতিতে প্রকৃতিতে আসে নতুন রূপ। একটু গরমের ভাব হলে এ সকল পাখিগুলো এলাকা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। কোন ধরণের অতিথি পাখি মানুষের ক্ষতি করে না। অথচ এ এলাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও শিকারিরা এ পাখিগুলো শিকার করে ভোজন বিলাসীদের কাছে বাজারে বিক্রয় করে যা দন্ডনীয় অপরাধ। এ সকল অতিথি পাখি বহুদুর দেশ থেকে জীবন বাঁচাতে এখানে আসে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হ’ল জীবন বাঁচাতে এসে তাদের নির্বিকারে জীবন দিতে হয়, যা দেখার কেউ নেই। দেশে আইন আছে কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই বললেই চলে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য অতিথি পাখিদের বিচরণক্ষেত্র মুক্তভাবে রক্ষা করতে হবে। এলাকার জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে, যেন কেউ পাখি শিকার বা বিরক্ত না করে।
|