নিউজ ডেস্ক : দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্মকর্তাদের কাজের মূল্যায়ন করে প্রতি বছরই পদোন্নতি অথবা বেতন বাড়ানো হয়। কিন্তু নিয়মিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) না থাকার অজুহাতে এবার কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন বন্ধ রাখা হয়েছে।
অথচ নিয়মিত এমডি না থাকা অবস্থায় ডিএসইতে প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ও এমটিও পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মহাব্যবস্থাপক (জিএম) পদে নিয়োগের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। নিয়মিত কর্মকর্তাদের কাজের মূল্যায়ন না করে উচ্চ পদে একের পর এক নিয়োগ দেয়ায় ডিএসইর কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পালন করা প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আব্দুল মতিন পাটোয়ারীর হস্তক্ষেপে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি অর্থাৎ বেতন বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।
তারা জানান, আব্দুল মতিন পাটোয়ারী ডিএসইতে সিএফও পদে যোগদানের পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কেপিআই (কি পারফরমেন্স ইন্ডিকেটর) পদ্ধতি চালু করেন। এতে দীর্ঘদিন ধরে ডিএসইতে কাজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি ও বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এক ধরনের জটিলতা তৈরি হয় এবং কর্মকার্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেও (বিএসইসি) একাধিক কর্মকর্তা এ নিয়ে অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের শুরুর দিকে ডিএসইর সার্ভিস রুল করে দেয়ার উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। ইতোমধ্যে সার্ভিস রুল করে তা ডিএসই কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে তা ধামাচাপা দিয়ে এখনও ডিএসইতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কেপিআই ভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি বহাল রয়েছে।
ডিএসইর একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ, কেপিআই ভিত্তিক মূল্যায়নের ফলে এক ধরনের অরাজকতা তৈরি হয়েছে। এর ফলে কর্মকর্তাদের সমস্যা দূর হওয়ার বদলে দিন যত যাচ্ছে বৈষম্য তত বাড়ছে। প্রতি বছর মূল্যায়নের সময় পার হওয়ার পরও তা দিতে বিলম্ব করা, জোরপূর্বক জুনিয়রদের পুওর মার্কিং (কম নম্বর দেয়া) করে ডিপার্টমেন্টাল হেডদের আউটস্ট্যান্ডিং মার্কিং (বেশি নম্বর) দেয়া হয়।
যেসব কর্মকর্তাকে পুওর মার্কিং দেয়া হয় বছর শেষে তাদের পদোন্নতি বা বেতন বাড়ানো হয় না। যারা আউটস্ট্যান্ডিং মার্কিং পান তাদের পদোন্নতি দেয়া হয়। এতে ৫ শতাংশ বেতন বাড়ে। এছাড়া যাদের গুড মার্কিং দেয়া হয় তাদের বেতন বাড়ে ৪ শতাংশ, তবে তারা পদোন্নতি পান না।
এ বিষয়ে ডিএসইর এক কর্মকর্তা বলেন, বিএসইসি থেকে সার্ভিস রুল করে দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আবার কেপিআই চালু থাকলেও তা-ও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। নিয়মিত এমডি না থাকার অজুহাত দেখিয়ে ভারপ্রাপ্ত এমডি আমাদের বঞ্চিত করছেন। অথচ তার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সিওও পদে একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আবার এমটিও পদেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার পরিচিতকে। এমডি না থাকার কারণ দেখিয়ে আমাদের কাজের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না, তাহলে বিভিন্ন পদে নতুন নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হচ্ছে কীভাবে?
তিনি আরও বলেন, ডিএসইর এক শ্রেণির কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে বঞ্চিত। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের ঘনিষ্ঠদের নানাভাবে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছেন। ফলে একদিকে কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে, অন্যদিকে ডিএসই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ ভালো কাজের পরও মূল্যায়ন না হওয়ায় তারা কর্মস্পৃহা হারাচ্ছেন।
ডিএসইর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমাদের কেজিআই দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে পরিচালনা পর্ষদ থেকে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপরও ভারপ্রাপ্ত এমডি কেপিআই আটকে রেখেছেন। অথচ তিনি চাইলেই তা দিয়ে দিতে পারেন। কোন স্বার্থে তিনি আমাদের কেপিআই আটকে রেখেছেন তা বুঝতে পারছি না। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা যেমন বাড়ছে, তেমনি ক্ষোভও বাড়ছে। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই। এখন সবকিছু নির্ভর করছে ভারপ্রাপ্ত এমডির হাতে।
এ বিষয়ে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত এমডি আব্দুল মতিন পাটোয়ারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
|