অনলাইন ডেস্ক : সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে বড় হয়েছে দাম কমার তালিকা। পাশাপাশি কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) যে কটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে তার থেকে প্রায় সাতগুণ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।
শেয়ারবাজারে এমন দরপতন হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজার মন্দার মধ্যে রয়েছে। মাঝে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতা দেখে গেলেও সার্বিকভাবে বাজার পতনের মধ্যে রয়েছে। অধিকাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী লোকসানের মধ্যে রয়েছেন।
তারা বলছেন, বাজার যখন ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে তখনই কোনো না কোনো খারাপ সংবাদ আসছে। বিশ্বমন্দা আসছে এমন গুঞ্জন কয়েকদিন ধরেই বাজারে ঘুরছে। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এমনিতেই আতঙ্ক রয়েছে। এর মধ্যে আজকের বড় দরপতন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আরও আতঙ্কিত করে তুলেছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, এদিন অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার মাধ্যমে লেনদেন শুরু হওয়ায় শেয়ারবাজার খুলতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ১০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টা সূচক ঊর্ধ্বমুখীই থাকে।
তবে দুপুর ১২টার পর থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমতে থাকে। এতে দেখতে দেখতে সূচকের বড় পতন হয়। সেই সঙ্গে ছোট হয় দাম বাড়ার তালিকা। আর বড় হয় পতনের তালিকা।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ২৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫৩টির। আর ১৮২টির দাম অপরিবর্তিত। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৫ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৪১৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২১ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২৭৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪০৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি সূচক কমার পাশাপাশি বাজারটিতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৯৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৩৪৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৪৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
দরপতনের বিষয়ে মো. সোহাগ নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে বাজারে দরপতন চলছে। যে শেয়ার কিনছি, তারই দাম কমে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিনিয়োগ করা পুঁজি অর্ধেক হয়ে গেছে। এই লোকসান কোনো দিন কাটিয়ে উঠতে পারবো কি না বুঝতে পারছি না।
তিনি বলেন, বিনিয়োগ করা শেয়ারের দাম একটু বাড়ছে তো পরক্ষণেই কমে যাচ্ছে। এভাবে লোকসানের পাল্লা শুধু ভারী হচ্ছে। লোকসানে শেয়ার বিক্রি করবো তারও উপায় নেই। একাধিক কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। এর মধ্যে এখন আবার নতুন দরপতন শুরু হয়েছে। এ অবস্থা কতদিন থাকবে বুঝতে পারছি না। প্রতিদিন বাজার চিত্র দেখছি, আর হতাশা বাড়ছে।
শেয়ারবাজারে দরপতনের কারণ হিসেবে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, সামনে অর্থনৈতিক মন্দা আসছে। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক আছে। আতঙ্কে অনেকে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছেন। এ কারণেই এই দরপতন। তবে বাজারে খুব বেশি পতন হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ এরই মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম ফ্লোর প্রাইসে চলে এসেছে।
পতনের বাজারে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটির ১০৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার ৭৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৬৩ কোটি ১৫৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- পেপার প্রসেসিং, কেডিএস এক্সসরিজ, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেম, বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন এবং জেএমআই হসপিটাল অ্যান্ড রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৬৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২১৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৪টির এবং ৮০টির দাম অপরিবর্তিত।
|