অচিরেই নির্বাচনি রোডম্যাপে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে এই আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।
লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যের শুরুতে তারেক স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগকারী বীর শহীদ এবং ‘মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক’ জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তারেক হরমান বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী করতে চাইছে? রাষ্ট্র মেরামতের জন্য অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের আর কত মাস কিংবা কত সময় প্রয়োজন সেটি জানার অধিকার জনগণের রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার জনগণের সামনে তাদের আগামী দিনের কর্ম পরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করলে এটি একদিকে জনগণের কাছে সরকারের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। অপর দিকে প্রশাসনিক কার্য্ক্রমেও গতিশীলতা বাড়বে।’
‘আমি বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, শত অস্পষ্টতা কাটিয়ে অচিরেই নির্বাচনি রোডম্যাপে যাত্রা শুরু করবে আমাদের প্রিয় এই বাংলাদেশ। সেই যাত্রায় আবারও বলছি, মন দিয়ে শুনবেন দলের প্রতিটি নেতাকর্মীৃ আপনাদের বিশ্বস্ত সঙ্গী হচ্ছে দেশের গণতন্ত্রকামী স্বাধীনতা প্রিয় জনগণ, আপনারা জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।’
রোডম্যাপের প্রসঙ্গ টেনে তারেক বলেন, ‘তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আগামী দিনের কর্ম পরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণার কথা শুনলেই যদি উপদেষ্টাদের চেহারায় অস্বস্তির ছাপ ফুটে উঠে, সেটি হবে অবশ্যই গণআকাঙ্ক্ষাবিরোধী।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘সরকার তাদের সব কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের কাছে যত বেশি স্বচ্ছ থাকবে জনগণও সরকারের প্রতি তত বেশি সমর্থনের হাত প্রসারিত রাখবে।’
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ ও স্বাধীনতা রক্ষা পেয়েছে। এই কারণে প্রায় আমি বলে থাকি— ১৯৭১ সাল ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্জনের, আর ২০২৪ সাল দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার।’
‘এমন পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে এবারের বিজয় দিবস অবশ্যই বেশি আনন্দের, গৌরবের, অনেক বেশি অর্থবহ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। আমি দূঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই, আগামীর বাংলাদেশে প্রতিটি স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস হয়ে উঠবে জনগণের প্রতি রাষ্ট্র ও সরকারের দায় কিংবা প্রতিশ্রুতি পূরণের একটি অর্থবহ দিন।’
তারেক বলেন, ‘রাষ্ট্র ও জনগণকে স্বনির্ভর ও শক্তিশালী করতে হলে রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের লালন, বিকাশ এবং চর্চা অত্যন্ত জরুরি। আমরা মনে করি, রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা অন্যতম প্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্র বিন্দু হচ্ছে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত জাতীয় সংসদ।’
‘জবাবদিহিতমূলক সরকার ও সংসদ যথাযথভাবে কার্য্কর থাকলে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত থাকে। আমাদের মনে রাখা দরকার জনগণ শক্তিশালী না থাকলে জাতীয় ঐক্যও শক্তিশালী হয় না।’
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিন দেশের কোনও না কোনও হাসপাতালে ডেঙ্গুতে মানুষের মৃত্যু অব্যাহত রয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ যোগাতে অনেকের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। এর পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সমাজের প্রায় প্রতিটি মানুষ। প্রতিদিনের সংসারের ব্যয় মেটাতে জনগণকে যুদ্ধ করতে হচ্ছেৃ।’
‘জনজীবনের নিত্য দুর্ভোগ কিংবা বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি শুধু সংস্কারের নামে সময় ক্ষেপণ করে, তাহলে জনগণের কাছে সংস্কার আগে না সংসার আগে, এই প্রশ্নটি মুখ্য হয়ে উঠতে পারে ‘
তিনি বলেন, ‘দুর্ভোগ বর্তমানে মেনে নিলেও জনগণ এখনও সরকারের বিরুদ্ধে তেমন উচ্চ-বাচ্য করছে না। কারণ, জনগণ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সফল দেখতে চায়।’
‘তবে আগেও বলেছি, আজও উল্লেখ করতে চাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেরা নিজেদেরকে সফল দেখতে চায় কিনা, তা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমেই প্রমাণ করতে হবে।’
তারেক বলেন, ‘একটি দেশের জন্য ৫৩ বছর সময় কম নয়ৃ এই কথাটি গতকাল (শনিবার) একজন প্রতিবন্ধী ভাই উল্লেখ করেছেন তার কিছু কথা বলতে গিয়ে। লাখো মানুষের রক্তের ওপর দিয়ে দেশের জনগণ আজ অভূতপূর্ব ঐক্যের মোহনায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই ঐক্য কাজে লাগিয়ে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।’
‘একটি বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ইতোমধ্যেই ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেৃ এই কর্মসূচির লক্ষ্যই হচ্ছে— শিশু-নারী-বৃদ্ধ অথবা দলমত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রকে অবশ্যই প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব নিতে হবে।
|