‘না’ ভোট ব্যবস্থা গণতন্ত্র বিকাশে বড় বাধা : বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম
তারিখ
:
29-12-2024
আব্দুল খালেক খোন্দকার : আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক ও দ্য এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা তাজুল ইসলাম মনে করেন ‘না’ ভোট ব্যবস্থা গণতন্ত্র বিকাশে একটি
বড় বাধা। বর্তমান নির্বাচন সংস্কার কমিশনে ‘না’ ভোটের যে বিষয়টির প্রস্তাবনা উল্লেখ করা হয়েছে সে ব্যাপারে বিশ্লেষক তাজুল বলেন, ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা দ্বারা নির্বাচন সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হবে একথা ধারনা করা ভুল। কারন ‘না’ ভোটের ব্যালোটও প্রভাবিত করা সম্ভব। কোন নির্দিষ্ট দল ও প্রার্থীর পক্ষে যেমন প্রশাসনের প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারন করা সম্ভব ঠিক তেমনিভাবে ‘না’ ভোটের পক্ষেও প্রভাব খাটানো এবং নির্বচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা সম্ভব। তিনি প্রশ্ন করেন, ধরা গেল ‘না’ ভোটের ব্যালটই সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করল, সেক্ষেত্রে নির্বাচনের ফলাফল কি ঘোষিত হবে? নির্বাচনটি কি বাতিল ঘোষণা করা হবে?
নির্বাচনে যদি ‘না’ জয়যুক্ত হয় তাহলে ধরে নিতে হবে জনগণ নির্বাচন চায় না অথবা দেশ পরিচালনার মত কোন যোগ্য প্রার্থী বা দল দেশে নাই; সে ক্ষেত্রে দেশে গণতন্ত্রের কি হবে? তাজুল ইসলাম নির্বাচন কমিশন সংষ্কার কর্তৃপক্ষের নিকট প্রশ্নটি রাখেন। উল্লেখ্য নির্বাচন সংষ্কার ব্যবস্থায় ‘না’ ভোট রাখাসহ তিনটি প্রস্তাবের বিষয়ে ইতোমধ্যে নির্বাচন সংষ্কার কমিশন মত দিয়েছেন। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, সদস্য মো. আবদুল আলীম, জেসমিন টুলী প্রমুখ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ‘না’ ভোট ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচন করতে গেলে বলতে হয়, বিগত ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের ইতিহাসে ভোটাররা প্রথমবারের মতো ‘না ভোট’ প্রয়োগ করেছিল। ওই সময় জারি করা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ধারা ৩১(৫)(বিবি)-তে এ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ বিধান অনুযায়ী ব্যালট পেপারের সবশেষ প্রার্থীর স্থানে লেখা থাকে ‘ওপরের কাউকে নয়’ এবং ভোটারদের সহজ পরিচিতির জন্য মার্কা রাখা হয় ‘ক্রস’। এটাই অন্য কথায় ‘না’ ভোট। তখন সারা দেশে মোট প্রদত্ত ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫৯ হাজার ২১০ ভোটের মধ্যে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪৩৭টি ‘না ভোট’ পড়েছিল। উল্লেখ্য, ওই নির্বাচনে ৩৮টি দল অংশগ্রহণ করলেও মাত্র ৬টি দল ‘না ভোটের’ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল। তার মানে ‘না ভোট’ সপ্তম স্থানে ছিল। আর বাঁকি ৩১ টি দল ‘না’ ভোটের নিচে অবস্থান করেছিল। কোন প্রচারণা, তদবির ছাড়াই জনপ্রিয়তার দিক থেকে ‘না’ ভোট সপ্তম স্থানে ছিল। সুতরাং বিশ্লেষক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘না’ ভোট বিজয়ী হলে সেক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে? ২০০৮ এর এ বিধান নিয়ে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিকরা সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাই পরবর্তী সময়ে সরকার এ ধারাটি বাদ দেয়। তাই তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থাকে এমনভাবে সংষ্কার করতে হবে যাতে ‘না’ ব্যালটের প্রয়োজন না হয়। প্রতিটি রাজনৈতিক দল সহ ভোট প্রার্থীগণ এমনভাবে বাছাই করতে হবে এবং সর্বোপরি নির্বাচন ব্যবস্থার সাথে জড়িত প্রতিটি পদ্ধতি এমনভাবে পরিচালনা করতে হবে যেন জনণণ নির্বাচনের ব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ ও অপছন্দের অবকাশ খুঁজে না পায়। দেশের মানুষ নির্বাচনের ব্যাপারে পুরোপুরি স্বচ্ছতা ও গ্রহনযোগ্যতা খুঁজে না পাওয়ার কারন বিগত বছরগুলির নির্বাচন যা পতিত সরকারের সময় ধারবাহিকভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল। তাই ‘না’ ভোটের পরিবর্তে গণতন্ত্র চর্চায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আর এটা নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়ন, উৎকর্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতার মাধ্যমেই সম্ভব। তাই বিশ্লষক তাজুল ইসলাম মনে করেন, ‘না’ ভোট ব্যবস্থা কেবলমাত্র গণতন্ত্রের প্রতিপক্ষ ও বাধাই হতে পারে কিন্তু গণতন্ত্রের বিকাশ ও উৎকর্ষতায় ‘না’ ভোটের কোনই ভূমিকা নাই।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : মো: তাজুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়: ২১৯ ফকিরের ফুল (১ম লেন, ৩য় তলা), মতিঝিল, ঢাকা- ১০০০ থেকে প্রকাশিত ।
ফোন: ০২-৭১৯৩৮৭৮ মোবাইল: ০১৮৩৪৮৯৮৫০৪, ০১৭২০০৯০৫১৪
Web: www.dailyasiabani.com ই-মেইল: [email protected]