মো. মামুন রানা
বর্তমান পৃথিবীতে কোন দেশের একক আধিপত্য করার সুযোগ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এখনকার দুনিয়ায় শুধু সামরিক শক্তি দিয়ে একক আধিপত্য ধরে রাখা সম্ভব নয়, দুনিয়া জ্ঞান বিজ্ঞান কিংবা টেকনোলজিতে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে এখন অবস্থান করছে। কেউ সামরিক শক্তিতে এগিয়ে থাকলেও অন্য কেউ টেকনোলজি, ইকোনমিক বা অন্য জায়গায় এগিয়ে। তাই একক মুরালিপনায় অন্য দেশ যদি আপনাকে না মানে, তাহলে আর সম্ভব না। আমাদের দক্ষিন এশিয়ার রাজনীতির হিসাবও এখন পালটে গেছে। এখানে ভারতের একক আধিপত্যের সুযোগ এখন আর নাই। বর্তমান ভু রাজনীতিতে চারিপাশে প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক খারাপ রেখে সুপার পাওয়ার কিংবা আঞ্চলিক আধিপত্য দেখানোর সম্ভাবনা ক্ষীন বা নেই বললেই চলে। আমাদের বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক রাজনৈতিক ভাবে ভালো নেই,যদিও দুই দেশের মানুষের সাথে নিবিড় আত্বীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের মন:স্তাত্তিক বিরোধ বাংলাদেশের জন্মের পর থেকেই চলে আসছে। এই বিরোধ সম্পুর্ণ রাজনৈতিক, এখানে ধর্মীয় বিরোধ নেই। বাংলাদেশে মুসলমানদের সাথে হিন্দুদের সম্পর্ক ভাই ভাইয়ের সম্পর্কের মত। হিন্দুত্ববাদের জন্য ভারতের সাথে বাংলাদেশের কোন বিরোধ নাই। আমাদের দক্ষিন এশিয়ার আরেক দেশ নেপালে হিন্দু ধর্মের মানুষ বাস করে প্রায় ৮২ শতাংশ কিন্তু নেপালের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক সব সময় ভালো। এখানে দেখতে হবে নেপাল কিন্তু হিন্দু রাস্ট্র। ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে নেপালের সাথেও বিরোধ থাকতো৷ আবার নেপাল আর ভারতের সম্পর্কও কিন্তু ভালো নেই। ঐদিকে মালদ্বীপ এর সাথে, এমনকি ভুটানের সাথেও ভারতের সম্পর্ক তলানিতে। তাহলে চারিদিকে প্রতিবেশীদের মধ্যে ভারতের কোন বন্ধু নেই। ভারতের রাজনৈতিক কোন সিদ্ধান্ত বা পররাষ্ট্রনীতির কারনে তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো নেই, এ বিষয়ে জানার জন্য বেশি জ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই৷ বাংলাদেশে বিগত ফ্যাসিবাদের সময়,আওয়ামী রেজিমকে ক্ষমতায় রাখার জন্য যা যা করার দরকার, ভারত তা সব টুকুই করেছে। এদেশের রাজনীতিতে নগ্ন হস্তক্ষেপ করার ফলে, এদেশের মানুষ ভারতকে আওয়ামী দোসর ভেবেছে। ভারতের পররাষ্ট্রনীতির এটাই সব চেয়ে বড় ভুল, তারা শুধু একটা দল বা গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক রেখেছে, দেশের মানুষের সাথে নয়। একপেশে বন্ধুত্ব, অতিরিক্ত দাদাগীরি বা মোড়ালিপনা দেখাতে গিয়ে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান এবং মালদ্বীপ এর সাথে সম্পর্ক শেষ এবং পরবর্তীতে এখন বাংলাদেশের সাথেও সম্পর্ক আগের সব সময়ের চেয়ে বাজেই বলা যায়। তাদের দুই পাশে চিরশত্রু চীন এবং পাকিস্তানের অবস্থান। ভারতের সুযোগ ছিল দক্ষিন এশিয়ার অন্য ছোট দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করে, সত্যিকারের দক্ষিন এশিয়ার মোড়ল হওয়ার, কিন্তু তারা তা করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তারা তাদের প্রতিবেশীদের ছোট হিসেবে দেখে বড় ভুল করেছে। তারা বুঝে নাই, তাদের পাশে ছোট দেশে অনেক স্মার্ট মানুষ বাস করে। বাংলাদেশের তরুন সমাজ এখন অনেক এগিয়ে, টেকনোলজি কিংবা জ্ঞান বিজ্ঞানে আমাদের যে অবস্থান তা ভারত বুঝে কিংবা না বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তাদের জন্য কাল হয়েছে। একটা প্রবাদ আছে- বাশের চেয়ে কঞ্চি বড়। ভারতের সাথে এই প্রবাদের অনেক মিল আছে। প্রকৃতপক্ষে ভুরাজনীতিতে তাদের অবস্থান কঞ্চির মত, যা তাদের পলিসির কারনেই হয়েছে। কিন্তু তাদের ভাবখানা বাশের মতই। বন্ধুত্বপুর্ন পলিসি দিয়ে, প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক রেখে ভারতের কঞ্চি থেকে বাশ হওয়ার সুযোগ ছিল।
|