আব্দুল খালেক খোন্দকার
আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লষক ও দৈনিক এশিয়া বাণীর প্রধান উপদেষ্টা মোঃ তাজুল ইসলাম মনে করেন যে দেশের চিকিৎসা বিভাগকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নতি করার এখনি উপযুক্ত সময়।
ভারত ভিসা বন্ধ করায় দেশের কয়েক লক্ষ মানুষ এখন ভারতে চিকৎসা সেবা গ্রহনে যেতে পারছেন না। সুতরাং এসকল রোগীদের দেশেই উন্নত চিকিৎসা প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসা প্রযুক্তি সংগ্রহ করে দেশের চিকৎসা সেবার মানকে জনগনের জন্য আস্থাশীল করতে হবে। দেশের চিকৎসা ব্যবস্থাকে উন্নতি করতে পারলে এদেশের লক্ষ লক্ষ রোগীকে দেশেই ধরে রাখা যাবে। চিকৎসার জন্য ভবিষতে এদেশের মানুষ আর ভারত বা পার্শ্ববর্তী কোন দেশে যাওয়ার কথা ভাবেন না। নিজ দেশে ভাল চিকৎসার ব্যবস্থা থাকলে রোগীরা কখনও প্রচুর টাকা খরচ ও ঝামেলা পোহায়ে বিদেশের মাটিতে চিকৎসার জন্য ধর্ণা দিতে যোবেন না। কিন্তু এজন্য প্রয়োজন বাংলাদেশকে সাশ্রয়ে মান সম্মত চিকৎসা প্রদানে সক্ষম হওয়া।
জনাব তাজুল বলেন, বিপুল জনগোষ্ঠীর এই দেশে অবশ্যই সুলভে আন্তর্জাতিক মানের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। বর্তমানে রাষ্ট্র সংষ্কার কর্মসূচীতে দেশবাসীকে সুলভে উন্নত চিকৎসা প্রদানের পরিকল্পনাটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারের স্বদিচ্ছা থাকলে দেশে চিকৎসার মান উন্নয়ন করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে জনাব ইসলাম মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাথীর মোহাম্মদের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাথীর মোহাম্মদ অসূস্থ হওয়ার পর তাঁকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা গ্রহনের জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। কিন্তু মোহাথির মোহাম্মদ বলেছিলেন, আমি দেশের সন্তান দেশেই চিকিৎসা গ্রহন করব। তাই তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের চিকিৎসা বিভাগকে বিশ্ব মানে উন্নতি করেন এবং দেশেই চিকিৎসা গ্রহন করে তিনি সূস্থ হন। এর পিছনে তাঁর দেশপ্রেমই ফুটে উঠেছে। তিনি বললেছিলেন দেশের মানুষকে ফেলে রেখে তিনি কেন স্বার্থপরের মত বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিতে যাবেন? দেশের সকল মানুষের চিকিৎসা লাভের অধিকার আছে। তাই তিনি দেশের চিকৎসা ব্যবস্থাকে উন্নতি করেন যাতে দেশের সকল মানুষই উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত না হয়।
জনাব তাজুল বলেন, বিশ্ব শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী ও বিশ্ব নন্দিত ব্যক্তিত্ব প্রফেসর ড. মুহম্মদ ইউনুস এখন বাংলাদেশের সরকার প্রধান। তিনিই উপযুক্ত ব্যক্তি যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের চিকৎসা ব্যবস্থা স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বিশ্বমানে হতে পারে। আজ দেশবাসী জনাব ইউনুসের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। দেশের প্রতি ভালবাসার কারনে তারা আজ ধর্ম-বর্ণ নির্বেশেষে একত্রিত হয়েছে। সুতরাং দেশবাসি সকলেই যেন সমান চিকৎসা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় সে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
নূরে আলম যিনি চিকিৎসা সেবা নিতে কয়েকবার ভারতে গিয়িছিলেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যখন দেশের বাইরে চিকিৎসাসেবা গ্রহণে যায় তখন তাদের নানান সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। নতুন পরিবেশ, নতুন জায়গা। চিকিৎসা সেবা প্রার্থীদের যেন এসব ঝামেলায় পড়তে না হয় অর্থাৎ তাঁরা যেন সুন্দর স্বাভাবিক এবং নির্মল পরিবেশে দেশেই চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারে, সে লক্ষ্যেই সরকরের কাজ করা উচিত। তবে আশার ব্যাপার হচ্ছে এখন বাংলাদেশেই পাওয়া যাচ্ছে অনেক সর্বাধুনিক প্রযুক্তির উন্নত মানের চিকিৎসা। এখন সরকার যদি আরও একটু সচেষ্ট হন তবে এদেশের মানুষ চিকিৎসা নিতে আর বিদেশে যাবেন না।
একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি রোগীদের প্রথম পছন্দ প্রতিবেশী দেশগুলো। চিকিৎসাসেবা প্রার্থীরা ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় চিকিৎসা নিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ যান ভারতে। ভারতে বিদেশি রোগীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশই বাংলাদেশি এবং দেশটির মেডিকেল ট্যুরিজম খাতের অর্ধেক আয় আসে বাংলাদেশি রোগীদের কাছ থেকে। যা ভারতের মেডিকেল অ্যান্ড হেলথ ট্যুরিজম খাতের সবচেয়ে বড় অবদানকারী। বাংলাদেশ যদি উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা দিতে পারে তবে এই বিশাল অঙ্কের টাকা দেশেই ধরে রাখা সম্ভব।
কিছুদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মানের ওপর যে র্যাংকিং প্রকাশ করেছিল, তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম৷ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের উপরে রয়েছে কেবল শ্রীলঙ্কা৷ তাদের অবস্থান ৭৬তম৷ ভারত ১১২ এবং পাকিস্তান রয়েছে ১২২তম অবস্থানে৷ ভুটান ১২৪, মালদ্বীপ ১৪৭, নেপাল ১৫০ এবং সবথেকে পিছনে রয়েছে আফগানিস্তান, ১৭৩তম অবস্থানে৷ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভারতের চেয়ে ভালো বলে এই র্যাংকিংয়ে প্রতীয়মান হয়েছে৷
তারপরও মানুষ ভারত যাচ্ছে চিকিৎসা নিতে। দেশের বাইরে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে রোগীদের যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তার মধ্যে অন্যতম ভাষা। মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম ভাষা। ভাষিক সমস্যা থাকলে মানুষে মানুষে ফলপ্রসূ যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটে। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ চিকিৎসা সেবা গ্রহণে বিদেশ যায়। ভাষাগত সমস্যার কারণে রোগীরা নানান ক্ষেত্রে তাদের মনের ভাব চিকিৎসকের কাছে প্রকাশ করতে পারেন না। এরপর রয়েছে খাবার। প্রতিটি দেশের সংস্কৃতিতে রয়েছে ভিন্নতা। খাবার সংস্কৃতির অংশ। তাই প্রতিটি দেশের খাবারেও রয়েছে ভিন্নতা। বাংলাদেশ থেকে যেসব সেবা প্রার্থী বিদেশে যান তারা খাবার নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েন।
থাকার জায়গা আরেকটি সংকট। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে যাওয়া মানুষজনের থাকা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। এক্ষেত্রে তাদের হয়তো হোটেল বা বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়। অনেক সময় সুবিধা মতো জায়গাও খুঁজে পাওয়া যায় না। পছন্দসই জায়গায় থাকতে হলে গুণতে হয় বাড়তি খরচ। দেশের বাইরে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে রোগীদের যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় দীর্ঘ ভ্রমণ সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। বয়োঃবৃদ্ধ এবং সংকটাপন্ন রোগীদের এক্ষেত্রে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যাঁরা বিভিন্ন বাহন ভ্রমণে স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করেন না তাদেরও এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। একেকটি রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ধরন একেক রকম। জটিল রোগের চিকিৎসা দীর্ঘসময় ধরে করতে হয়। বাংলাদেশ থেকে যেসব চিকিৎসাপ্রার্থী বিদেশে যান তাদের চিকিৎসাবাবদ বিপুল অংকের টাকা খরচ হয়। এবং এর পাশাপাশি তাদের স্বাভাবিক কাজও ব্যাহত হয়।
বিদেশে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে যাওয়া বাংলাদেশিদের যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো ভালো ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পাওয়া। ভালো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সঠিক চিকিৎসা পাওয়া দুষ্কর। এছাড়া দালালের খপ্পড়ে পড়া, ভিসা প্রসেসিং নিয়ে সমস্যা তো রয়েছেই। সঠিক সময়ে ভিসা না পাওয়ার কারণে অনেক সময় বিদেশে চিকিৎসা সেবা নিতে যাওয়া রোগীদের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আগে থেকেই যেখানে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করবে সেখানে ডাক্তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট থেকে শুরু করে থাকার জায়গার ফরমাশ দেয়া থাকে। সঠিক সময়ে ভিসা না পেলে চিকিৎসাসেবা প্রার্থীদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বেশ কিছু খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে দেশটি। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও দেশটি তেমনিভাবেএগিয়ে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। দেশেই যাতে অভিনব পদ্ধতির উন্নত সেবা পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। তাই বিশ্বের সেরা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীদের উন্নত মানের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে বাংলাদেশের হাসপাতালগুলো মানুষের মন জয় করবে ও দেশের অর্থ বিদেশে ব্যয় থেকে মানষকে সাহায্য করবে এই আশাই এদেশের সকল মানুষের। চিকিৎসা সেবা প্রদানে বাংলাদেশ নতুন দিগন্তের উন্মোচন হোক।
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সরকারি অবহেলিত এবং প্রহসনের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা দ্রুত পরিবর্তন হোক। অন্তর্বর্তী সরকারের পতি এদেশের মানুষের সেই আবদার যে তারা যেন ভারতের এই বৈরীতার সুযোগ নিয়েই দেশের সাস্থ্য বিভাগে ঢেলে সাজিয়ে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলেন।
আমাদের হাসপাতালে সেবা, সেবারমান, সেবাগ্রহিতার দায়িত্ব-কর্তব্য, স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়তিদের আচার-আচারণ, বিনামূল্যে সরবারহ করা ঔষধ বিষয়, ডাক্তাদের সময়মত উপস্থিতি, ভর্তি রোগিদের খাবার ও পরিবেশন,, হাসপাতালের জনবল, হাসপাতালের অফিস সময় নতুন যে নীতিমালা হয়েছে সে বিষয়, পানি ব্যবস্থাপনা সহ নানাবিধ বিষয়ে যাতে দ্রুত উন্নতি হয়।
|